Tuesday, December 13, 2022

রক্তদানে উপকৃত হন দাতা নিজেই

১৪ জুন বিশ্ব রক্তদাতা দিবস তথা World Blood Donor Day (WBDD)। ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এই দিনটিতে রক্তদানের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা করা হয়। পাশাপাশি বিশ্বের রক্তদাতাদের এই বিশেষ দিনে কৃতজ্ঞতা জানাতেই দিনটি পালন করা হয় বিশ্বব্যাপী। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (WHO) দ্বারা চিহ্নিত আটটি অফিশিয়াল ‘গ্লোবাল পাবলিক হেলথ’ ক্যাম্পেইনিংয়ের মধ্যে একটি হলো বিশ্ব রক্তদাতা দিবস। বিশ্ব রক্তদাতা দিবসের মূল উদ্দেশ্য হলো গোটা বিশ্বের মানুষকে রক্তদানের ব্যাপারে সচেতন করে তোলা, উদ্বুদ্ধ করা, মানুষের মাঝে সংহতি এবং সামাজিক সম্প্রীতি বাড়াতে রক্তদানের গুরুত্ব প্রচার, রক্তদানের ক্ষেত্রে অমূলক ভয় দূর করা, নতুন রক্তদাতা তৈরি করা এবং নিরাপদ রক্ত ব্যবহারে উৎসাহিত করা। সেই সঙ্গে দেশের জনগণকে প্রাণঘাতী রক্তবাহিত রোগ হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইসিস সি, এইডস, সিফিলিস এবং ম্যালেরিয়া রোগ থেকে নিরাপদ থাকার জন্যে স্বেচ্ছা রক্তদান ও রক্তের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে অনেক সংস্থা, স্বেচ্ছাসেবীরা এগিয়ে আসেন রক্তদানের মহৎ ব্রত নিয়ে। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং তাদের একত্রে কাজ করার বার্তাও দেয়া হয় এ বিশেষ দিনটির মাধ্যমে। ২০২২ সালে বিশ্ব রক্তদাতা দিবসের বিশ্বব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজক দেশ মেক্সিকো। এ দিবসকে কেন্দ্র করে বৈশ্বিক অনুষ্ঠানের আয়োজন হবে মেক্সিকো সিটিতে। প্রতিবছর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দিবসটির একটি প্রতিপাদ্য বিষয় ঠিক করে। ২০২২ সালে দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয়- ‘Donating blood is an act of solidarity. Join the effort and save lives’. রক্তদানে যেভাবে উপকৃত হন রক্তদাতা রক্তদান যে গ্রহীতাদের জীবনকেই শুধু বাঁচায় তা-ই নয়, নিয়মিত রক্তদান রক্তদাতাকেও দিতে পারে অসাধারণ সব উপকার: হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো আমেরিকান জার্নাল অব এপিডেমিওলজিতে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয় যে, নিয়মিত রক্তদাতাদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ৩৩ ভাগ কম এবং তাদের হার্টঅ্যাটাক হওয়ার ঝুঁকি কম ৮৮ ভাগ। রক্তদান করলে দাতার শরীরে লৌহের পরিমাণ কমে যাওয়াকেই এর কারণ হিসেবে বলেন বিজ্ঞানীরা। রক্তে লৌহের পরিমাণ বেশি থাকলে রক্ত ঘন হয়, কোলেস্টেরল তৈরি হওয়ার হার ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। আর কোলেস্টেরলের সাথে যে হৃদরোগের যোগ আছে তা তো কারো অজানা নয়। তাছাড়া লোহা বা আয়রনের পরিমাণ বেড়ে গেলে অনিয়মিত হৃদস্পন্দন, অবসাদ, পেশির দুর্বলতা, ধমনীর শক্ত হয়ে যাওয়া, লিভার বড় হয়ে যাওয়াসহ নানান অসুখের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। অন্যদিকে রক্ত দিলে একজনের শরীর থেকে প্রায় ২২৫ থেকে ২৫০ মিলিগ্রাম লোহা বেরিয়ে যায়। যা হৃদরোগসহ এর কারক হিসেবে যেসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে তার ঝুঁকি কমায়। বাড়তি ওজন হ্রাস প্রতি পাইন্ট (এক গ্যালনের আট ভাগের এক ভাগ) রক্ত দিলে ৬৫০ ক্যালরি করে শক্তি খরচ হয়। কারণ দেহ তখন তা পূরণের জন্যে কাজে নিয়োজিত হয়। কাজেই ওজন কমানোর ক্ষেত্রে এর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানো মিলার-কিস্টোন ব্লাড সেন্টারের এক গবেষণায় দেখা যায়, যারা বছরে দুই বার রক্ত দেয়, অন্যদের তুলনায় তাদের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম। বিশেষ করে ফুসফুস, লিভার, কোলন, পাকস্থলী ও গলার ক্যান্সারের ঝুঁকি নিয়মিত রক্তদাতাদের ক্ষেত্রে অনেক কম বলে দেখা গেছে। চার বছর ধরে ১২০০ লোকের ওপর এ গবেষণা চালানো হয়। গবেষকরা বলেন, নিয়মিত রক্ত দিলে রক্তের ইনফ্লেমেটরি মার্কার কমে ও এন্টিঅক্সিডেন্ট উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ে। বিনামূল্যে সুস্থতা যাচাই রক্ত দিতে এলে প্রতিবারই একজন রক্তদাতার সুস্থতার বেশ কিছু পরীক্ষা একদম ফ্রি হয়ে যাচ্ছে। যেমন তার নাড়ি, ব্লাড প্রেশার, দেহের তাপমাত্রা, হিমোগ্লোবিন মাত্রা ইত্যাদি। তাছাড়া রক্ত দেয়ার পর তার হয়ে যাচ্ছে হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি, এইচআইভি, সিফিলিস, গনোরিয়া এরকম রক্তবাহিত পাঁচটি রোগের স্ক্রিনিং। ফলে প্রতি চার মাসে একবার করে বছরে তিনবার হয়ে যাচ্ছে তার সুস্থতার সার্বিক একটি যাচাই। রক্তদাতা জানতে পারেন তিনি কোনো সংক্রামক রোগে ভুগছেন কিনা। প্রাণবন্ততা ও কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি রক্তদান করার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের শরীরের মধ্যে অবস্থিত বোনম্যারো বা অস্থিমজ্জা নতুন কণিকা তৈরির জন্য উদ্দীপ্ত হয়। রক্তদান করার মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই দেহে রক্তের পরিমাণ স্বাভাবিক হয়ে যায়, আর লোহিত কণিকার ঘাটতি পূরণ হতে সময় লাগে চার থেকে আট সপ্তাহ। এই পুরো প্রক্রিয়া আসলে শরীরের সার্বিক সুস্থতা, প্রাণবন্ততা আর কর্মক্ষমতাকেই বাড়িয়ে দেয়। তবে রক্তদানের এ উপকারগুলো আসলে তারাই পাবেন যারা নিয়মিত রক্তদান করেন। জার্নাল অব আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের এক রিপোর্টে দেখা গেছে, ৪৩ থেকে ৬১ বছর বয়সী যেসব মানুষ প্রতি ছয় মাস পর পর নিয়মিত রক্ত দেন, তাদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কম। আর প্রাকৃতিক নিয়মেই যেহেতু প্রতি চার মাস পর পর আমাদের শরীরের লোহিত কণিকা বদলায়, তাই বছরে তিনবার রক্ত দিলে শরীরের লোহিত কণিকাগুলোর প্রাণবন্ততা আরও বেড়ে যায়। মন ভালো করতে অনবদ্য রক্তদানের ফলে মৃত্যুপথযাত্রী মানুষের জীবন বাঁচানো সম্ভব হয়। কাউকে সাহায্য করার মতো, বিশেষ করে কারো জীবন বাঁচানোর মতো প্রশান্তিদায়ক অনুভূতি অন্য কিছুতেই নেই। সেই মানসিক তৃপ্তি কখনই অন্য কোনোকিছুর সঙ্গে তুলনীয় নয়। রক্তদানের মাধ্যমে মানুষের প্রতি মানুষের মমত্ববোধও বাড়ে। ধর্মীয় দৃষ্টিতে রক্তদান ধর্মীয় দিক থেকেও অত্যন্ত পুণ্য বা সওয়াবের কাজ। পবিত্র কুরআনের সূরা মায়েদার ৩২নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘...আর যখন কেউ কোনো মানুষের জীবন রক্ষা করল, সে যেন সমগ্র মানবজাতির জীবন রক্ষা করল।’ বলা হয়েছে- ‘নিঃশর্ত দানের জন্যে রয়েছে চমৎকার পুরস্কার। তারা লাভ করে আশীর্বাদধন্য দীর্ঘজীবন ও অমরত্ব।’ আসলে সব

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: